Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

সেবা কিভাবে পাবেন

 

৪০ লাখ সুবিধাভোগীকে ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা প্রদানের নির্দেশ

 

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী


মিজান চৌধুরী ॥ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ৪০ লাখ সুবিধাভোগীকে ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে ১০ টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট সরকারী ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকেই ভাতার টাকা সুবিধাভোগীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে জমা হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রত্যেক ব্যাংককে চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। ওই নির্দেশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশেষ করে ভাতাভোগীদের জন্য সহজ শর্তে হিসাব খোলার আলাদা ফরম তৈরি করছে।
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর থেকে এ প্রস্তুতি চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে আমরা ব্যাংকগুলোর এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। তবে ব্যাংকগুলো এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে তাদের লোকবলের সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন।
সর্বশেষ তথ্য মতে, অধিকাংশ জেলা ও থানা পর্যায়ে সুবিধাভোগীরা ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাব খোলা শুরু করেছে। তবে এখনও পুরোপুরি হিসাব খোলা শেষ হয়নি। মাঠ পর্যায়ে সুবিধাভোগীদের কাছে এ সংবাদ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক ইতোমধ্যে সুবিধাভোগীদের জন্য সুবিধাভোগী ভাতা প্রদান ফরম নামে আলাদা ফরম ছাপিয়েছে। ওই ফরম সাধারণ সঞ্চয় হিসাব খোলার ফরম থেকে সহজ সরল শর্ত দিয়েছে। যাতে সুবিধাভোগী খুব সহজে ফরম পূরণ করে ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারেন।
সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়কৃত ভাতার টাকা প্রথমে স্থানান্তর করা হবে থানার টিএনও ও সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তার নামে। এজন্য ওই দুই কর্মকর্তাকে একটি যৌথ হিসাব খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। তাদের ব্যাংক হিসাবে ভাতার অর্থ জমা হওয়ার পর সেখান থেকে ব্যাংক পৃথক পৃথক সুবিধাভোগীর হিসাবে স্থানানত্মর করা হবে। ফলে একজন সুবিধাভোগী তার সুবিধা মতো সময়ে ভাতার অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারবেন।
জানা গেছে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সচিবকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর অর্থ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মধ্যে বিতরণ করতে নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশ বাসত্মবায়নের জন্য কাজ শুরম্ন করে।
সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পোস্ট অফিস ছাড়াও ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে ভাতার টাকা প্রদানের চিনত্মা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম এটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদানের সিদ্ধানত্ম হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধানত্মের অনুমোদন দিয়েছেন। এটি বাসত্মবায়ন করতে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানের বরাবর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে সব ব্যাংককে এটি বাসত্মবায়নে নির্দেশ দেয়। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর আওতায় ভাতাভোগীরা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন। ওই ব্যাংক হিসাবে এই টাকা চলে যাবে। এতে একজন উপকারভোগীর অনেক হয়রানি কমবে।
চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিভিন্ন কর্মসূচীতে ১৭শ' ৬০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিতরণের ঘোষণা প্রদান করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা দেয়া হচ্ছে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জনকে। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৮৯১ কোটি টাকা। এছাড়া বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত মহিলাদের জন্য দুস্থ ভাতা দেয়া হচ্ছে ৯ লাখ ২০ হাজার মহিলাকে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৩১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
দুই লাখ ৮৬ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেয়া হচ্ছে ১০২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দরিদ্র মাতৃকালীন ভাতা কর্মসূচীর আওতায় ৯২ হাজার উপকারভোগীকে ভাতা দেয়া হচ্ছে ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং কর্মজীবী দরিদ্র মায়ের মাতৃকালীন ভাতা খাতে ৭৭ হাজার ৬শ' উপকারভোগীকে ৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেড় লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা দেয়া হচ্ছে ৩৬০ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের আগে প্রত্যেক ভাতাভোগীকে লাইন ধরে গিয়ে ভাতার টাকা গ্রহণ করতে হয়েছে। এতে বয়স্ক ও প্রবীণ লোকদের পৰে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আবির হোসেন এই সুবিধা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি ঢাকা বাস করি। কিন্তু ভাতা নিতে যেতে হয় কুমিলস্নায়। প্রতি তিন মাস পর পর কষ্ট করে কুমিলস্নায় গিয়ে এই ভাতার টাকা লাইনে দাঁড়িয়ে তুলতে হয়। এখন আর কষ্ট হবে না যদি ভাতার টাকা ব্যাংকে চলে আসে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যসীমা ৩১.৫ শতাংশে এসেছে। গত পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৮.৫ শতাংশ। সরকার দারিদ্র্য নিরসনের জন্য বিশেষ ভাতা প্রদান, ৰুদ্রঋণ ও তহবিল প্রদানের মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের জন্য আত্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান ও শিৰা, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিৰণের মাধ্যমে দারিদ্র্যের হার হ্রাস করার কৌশল অবলম্বন করেছে